রবিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৮

রাসুল(সঃ)-এর মাক্কী জীবনের সংক্ষীপ্ত রূপ-রেখা।
মুহাম্মদ আবদুল্ললাহ নু'মান
আজ থেকে সাড়ে-চৌদ্দশত বছর পূর্বে গোটা আরব-সমাজ যখন কুফর-এর অন্ধকারে নিমজ্জিত,মারামারি,হানাহানি,যুলুম-অত্যাচার ও লুটতরাজ ছিল নিত্য-দিনের অভ্যাস।

এহেন পরিস্থিতিতে আল্লাহ্ তা'য়ালা কুফরী শক্তির অবসান ঘটাতে,মানুষকে মুক্তির পথ দেখাতে,হেদায়াতের ঝান্ডা হাতে দিয়ে , মক্কার সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে রাসূলে আরাবী (সঃ)-কে আব্দুল্লাহর ঔরসে মা-আমিনার কোলে প্রেরণ করেন।

শিশু নবিজী(সঃ) যখন হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে শৈশব,কৈশোর, ও নবযৌবন পেরিয়ে একচল্লিশ বছর বয়সে পদার্পণ করলেন, তখন তিনি হেরা-গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় নবুয়্যাত প্রাপ্ত হন। আর নবুয়্যাত প্রাপ্তির সময় থেকে মদীনায় হিজরতের পূর্ববর্তী সময়টুকুকে বলা হয় মাক্কী জীবনী। 

নবুয়্যাত প্রাপ্তির পর রাসুল(সঃ) উপলব্ধি করতে পারলেন যে, দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে হলে তাঁকে পুরো আরব সমাজের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াতে হবে। তবুও তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে নিজ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদেরকে গোপনে ইসলামের দিকে আহবান শুরু করেন। তাঁর এ আহবানে সর্বপ্রথম যিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তিনি হচ্ছেন নবী কারীম (সঃ)-এর প্রিয়তমা হযরত খাদীজা (রা:)। অতঃপর যিনি বয়স্কদের মধ্যে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তিনি হচ্ছেন হযরত(সঃ)-এর বন্ধুবর হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা:)।


কিছু দিন বাদে নবীজি(সঃ) দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষে নিজবংশীয় বিশিষ্ট ব্যাক্তদের নিয়ে একটি ভোজ-সভারও আয়োজন করেন।  এ সভায় তিনি সকলকে একনিষ্ঠ ধর্মের দিকে আহবান করেন। কিন্তু এ আহবানে দশ-বছর বয়সী হযরত(সঃ)-এর আপন চাচাতো ভাই হযরত আলী কারামাহুল্লাহু ওয়াজহা ব্যাতিত কেউই সাড়া দেয়নি।

এ ধারাবাহিকতায় তিন বছর গোপনে দাওয়াত দেওয়ার পর প্রকাশ্যে ইসলামের দিকে আহবানের আদেশাচ্ছলে  আল্লাহ্ তা'য়ালা  এরশাদ করেনঃ
               فاصدع بما تؤمر و أعرض عن المشركين
এ আয়াতের মাধ্যমে আদিষ্ট হওয়ার পর রাসুল (সঃ) সাফা পর্বতের উপর দাঁড়িয়ে সকল গোত্রকে একত্র করে একনিষ্ঠ ধর্মের প্রতি প্রকাশ্যে আহবান করেন। এতে সকলেই তাঁর উপর প্রচন্ডভাবে ক্ষেপে যায়, এমনকী হুযুর(সঃ)-এর চাচা আবু লাহাব বলে ওঠে:- 
              تتبا لك يا محمد!أ لهذا جمعتنا....؟
(অর্থাৎ;ধ্বংস হও হে মুহাম্মদ! এ জন্য আমাদেরকে জমায়েত করেছ?)
তখন থেকেই ইসলামের বিরুদ্ধে কঠোর ষড়যন্ত্র ও অত্যাচার শুরু হয়।

বিরুদ্ধবাদী কাফের নেতারা কয়েকটি স্তরে নির্যাতন করতে শুরু করে , প্রথমত ব্যঙ্গ , বিদ্রূপ ও কুটতর্কের মাঝে দু-একটা যুক্তি প্রদর্শন করার দ্বারা।
অতঃপর তাদের বিরোধীতা ক্রমশই গুন্ডামী, সন্ত্রাসী ও হিংস্রতার রূপ নিতে থাকে। তারা রাসুল (সঃ)-এর 
যাতায়াতের রাস্তায় নিয়মিত কাঁটা বিছিয়ে দিত, নামায পড়ার সময় ঠাট্টা ও হৈ চৈ করত, সিজদার সময় তাঁর পিঠের উপর পশুর নাড়ী-ভুড়ী এনে রেখে দিত ও ক্বুরআন পড়ার সময় আহমক বলে গালি দিত।
এ সব কিছু করে তারা ব্যার্থ হয়ে রাসুল (সঃ)-কে স্বঃপরিবারে শিয়াবে আবু তালেবে তিন বছর বয়কট করে রাখে। সেখানে তাঁরা ক্ষুধার তাড়নায় গাছের পাতা ও শিকড় খেয়ে অতি কষ্টে তিনটি বছর অতিক্রম করেন।
সেখান থেকে মুক্তির পর কাফেররা রাসুল(সঃ)-এর সাথে আপোসের জন্য কাফেরনেতা গিয়ে বলে;তুমি কি মক্কার সবচেয়ে বড় ধনী হতে চাও? তুমি কি মক্কার রাজত্ব চাও? নাকি সবচেয়ে সুন্দর নারীকে বিবাহ করতে চাও? বল! এ সব কিছু এনে তোমার সামনে স্তূপ করে রাখব।
এ সব কিছু চুপ করে শুনে তেজদ্বীপ্ত কন্ঠে ঘোষণা করলেন:- তোমরা যদি আমার এক হাতে চাঁদ আর অপর হাতে সূর্য এনে দাও ! তবু তোমরা আমাকে দ্বীনের দাওয়াত থেকে পিছুটান করতে পারবে না।
এতেও তারা সফল হতে না পারায় রাসুল(সঃ)-কে একেবারে খতম করে দিতে চাইলে চাচা আবু তালেবের কারনে তা সম্ভবপর হয়নি।

নবুয়্যাতের দশম বছর রাসুল(সঃ)-এর অন্যতম ভরসা প্রিয়তমা হযরত খাদীজা (রাঃ) ও হুযুর(সঃ)-এর চাচা আবু তালেব কয়েক দিনের ব্যবধানে ইন্তেকাল করেন।
এ সুযোগে কাফেররা ইসলাম গ্রহন তো দুরের কথা, উল্টো তাঁর উপর চড়াও হওয়ার ব্যার্থ চেষ্টা চালায়।

তখন তিনি মনের মধ্যে বুক ভরা বেদনা নিয়ে দাওয়াতের মিশন নিয়ে তায়েফ হিজরত করেন। সেখানেও তিনি দাওয়াত দিতে গিয়ে ক্রোধ ও  উপহাসের শিকার হন । এমনকী বদবখত কাফেরগুলো লম্পট তরুণদেরকে তাঁর উপর লেলিয়ে দেয়। তারা ইট-প্রস্তরের আঘাতে নবীজি (সঃ)-এর দেহ মোবারক রক্তাক্ত করে দেয়। তবুও তিনি হাল না ছেড়ে নতুন সম্ভাবনার চিন্তা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি মদীনায় হিজরত করতে বাধ্য হন।

এই হচ্ছে রাসুল(সঃ)-এর অতি সংক্ষীপ্ত মাক্কী জীবনের রূপ-রেখা।আজ আমাদের এবং সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের উচিত, রাসুল(সঃ)-এর প্রতিটি মিশনের ক্ষেত্রকে অনুসরণ করা এবং তদানুযায়ি আমল করা।
আল্লাহ্ তা'য়ালা তাওফীক দান করুন।
                                                --আমীন।
(বি:দ্র:এটি অতি সংক্ষীপ্ত আকারে 4-5 মিনিট বক্তৃতা দেওয়া যেতে পারে, এ হিসাবে লেখা হয়েছে।) 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন